দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সব ক্ষেত্রেই মূলধন বাজেটিং প্রয়োগ করা হয়। স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয় থেকে শুরু করে, ব্যবসার প্রসার, ব্যবসার আধুনিকায়ন, স্থায়ী সম্পত্তির প্রতিস্থাপন এবং নতুন পণ্য বাজারে ছাড়া সংক্রান্ত সকল প্রকার বিনিয়োগ পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিং-এর প্রয়োগ রয়েছে। এবার আমরা মূলধন বাজেটিং প্রয়োগের কয়েকটি জনপ্রিয় ক্ষেত্র আলোচনা করব।
স্থায়ী সম্পত্তির ক্রয় : যেকোনো কোম্পানি নতুন ব্যবসায় শুরু করতে গেলে স্থায়ী সম্পত্তি যেমন: জমি, দালানকোঠা, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ইত্যাদি ক্রয় করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, মুদি দোকানিকে তার ব্যবসায় শুরু করার সময় ফ্রিজ, তাকিয়া, ওজন মাপার স্কেল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। রেস্টুরেন্ট মালিককে তার ব্যবসায় শুরুর সময় চেয়ার, টেবিল, হাঁড়ি-পাতিল, রান্নার অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিতে হয় অনুরূপভাবে বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি, দালানকোঠা, কারখানা নির্মাণ, মেশিনারিজ ক্রয় ইত্যাদি সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যেকোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের এসব সম্পত্তি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিং প্রয়োগ করা হয়। কারবার চলতে চলতে বিভিন্ন সময়ে এসব স্থায়ী সম্পত্তি অকেজো বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এমতাবস্থায় এসব স্থায়ী সম্পত্তি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রেও মূলধন বাজেটিং প্রয়োগ করে কোম্পানি সিদ্ধান্ত নেয় ।
ব্যবসার পণ্য উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিকল্পে সম্প্রসারণ : চলমান কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তার ব্যবসায় শুরু করার পর উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোম্পানির নতুন মেশিন ক্রয়ের প্রয়োজন হয়। উদাহরণস্বরূপ দর্জির দোকানি তার বর্তমান ব্যবসায় ১টি সেলাই মেশিন থাকা সত্ত্বেও ভোক্তাদের ঈদের চাহিদার কথা চিন্তা করে নতুন আর একটি সেলাই মেশিন কেনার চিন্তা করতে পারে। মুদির দোকানি তার দোকানে ফ্রিজ থাকা সত্ত্বেও আরেকটি ফ্রিজ কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এজন্য কোম্পানিকে নতুন মেশিন ক্রয় বাবদ কত ব্যয় হবে, কারবারের আয় তাতে করে কত বাড়বে ইত্যাদি প্রাক্কলন করে মূলধন বাজেটিং প্রয়োগ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় ।
পণ্য বৈচিত্র্যায়ণ: কোম্পানি তার ব্যবসার সম্প্রসারণের জন্য চলমান পণ্যের পাশাপাশি নতুন পণ্য বাজারে ছাড়ার প্রয়োজন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো কোম্পানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনয়নের জন্য আমের জুসের পাশাপাশি কমলার জুস বা আপেলের জুস বাজারে ছাড়ার চিন্তা করতে পারে। নতুন পণ্য বাজারে ছাড়ার ক্ষেত্রে নতুন পণ্যের আয়ুষ্কাল, পণ্যের উৎপাদন খরচ, বাজার চাহিদা, পরিচালনা খরচ এবং সম্ভাব্য আয় প্রাক্কলন করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিং-এর প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়।
প্রতিস্থাপন ও আধুনিকায়ন : ব্যবসার প্রয়োজনে উৎপাদন পদ্ধতির প্রতিস্থাপন ও আধুনিকায়নের প্রয়োজন হয়। উদাহরণস্বরূপ, দর্জির দোকানি পা-চালিত সেলাই মেশিনের পরিবর্তে বিদ্যুৎ চালিত সেলাই মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অন্যদিকে চুল কাটার সেলুনের মালিক তার দোকানকে ভেতরের সাজসজ্জা পরিবর্তন করে এসি সেলুন বানানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে উৎপাদন খরচ কমানো এবং এর মাধ্যমে ব্যবসার লাভ বৃদ্ধি করা। এক্ষেত্রে কোম্পানির পুরাতন উৎপাদন পদ্ধতির সাথে নতুন পদ্ধতির তুলনা প্রয়োজন হয়। উভয় পদ্ধতিতে কোম্পানি আয়, পরিচালনা ব্যয়, আয়ুষ্কাল ইত্যাদি হিসাব করে নিট নগদ প্রবাহ নির্ধারণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। অতএব, উৎপাদন পদ্ধতির প্রতিস্থাপন ও আধুনিকায়নে মূলধন বাজেটিংয়ের প্রয়োগ লক্ষ করা যায়।
আরও দেখুন...